১৭ মার্চ ২০২০, মঙ্গলবার। রাত আটটায় বঙ্গবন্ধুর জন্মক্ষণে তারই কন্যা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক বাংলাদেশের বিশ্বস্বীকৃত সফল সরকারপ্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান। শুরু হবে মুজিববর্ষ। চলবে আগামী বছরের ১৭ মার্চ পর্যন্ত।
১২ মার্চ বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে ঘোষিত করোনা ভাইরাস আতঙ্কে কর্মসূচি কাটছাঁট করা হলেও বাঙালি জাতি তাকে লালন করবে হৃদয়ের মধ্যখানে আর বর্ষটি পালন করবে অনাড়ম্বরে সবটুকু শ্রদ্ধা দিয়ে। মুজিববর্ষ পালনের মধ্য দিয়ে আমরা হৃদয়ে প্রোথিত করে নেব জাতির পিতার আদর্শকে, উজ্জীবিত করব নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, স্মরণ করব প্রাক-স্বাধীনতাকালের বঙ্গবন্ধুর অসম সাহসিক নেতৃত্বে পরিচালিত স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের দিনগুলোকে, দেখব তার নেতৃত্বে স্বাধীন-উত্তর বাংলাদেশের বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে উত্তরণের কৌশলগুলো এবং একই সাথে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো আত্মস্থ করার লক্ষ্যে পর্যালোচনা করব তার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনাগুলো।
তিনি যে সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন, যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন বাংলার মানুষের সার্বিক মুক্তির জন্য, তা বাস্তবায়নের সময় তিনি পাননি বটে, তবে সেসব বাস্তবায়নের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তারই জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা যিনি বিশ বছর পরবাসে থেকে জাতির ক্রান্তিলগ্নে দেশে ফিরে এসে চারবার প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসে দেশকে অভাবনীয় সাফল্যের চ‚ড়ায় পৌঁছিয়ে দিয়েছেন।
মহান সৃষ্টিকর্তা কাকে দিয়ে কী করাবেন তা শুধু তিনিই জানেন। তাঁর অসীম কুদরতের বিষয় হৃদয়ঙ্গম করা কঠিন। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে সাম্রাজ্য দান করেন, আবার যার কাছ থেকে ইচ্ছা তার কাছ থেকে সাম্রাজ্য কেড়ে নিয়ে যান; যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা তাকে অপমানিত করেন। সব রকমের কল্যাণ তার হাতেই নিবদ্ধ। বিধাতার এরূপ ইচ্ছার প্রতিফলনের অনেক নজির রয়েছে ইতিহাসের পাতায়।
দুটি প্রকাশ্য নজির আমরা দেখতে পাই আমাদের এই প্রিয় মাতৃভ‚মিতে। প্রথম নজির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি বিধাতার করুণা। এ মহান বাঙালি নেতাকে নিঃশেষ করে দেয়ার জন্য পাকিস্তানি স্বৈরশাসকরা কী না করেছে। তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, জীবনের সোনালি দিনগুলোতে কারাগারে নিক্ষেপ করে জীবন-যৌবন ব্যর্থ করে দেয়ার পরিকল্পিত চক্রান্ত এবং সর্বশেষে একাত্তরে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় কারাগারের সামনেই খুঁড়ে রাখা কবর, সবই ছিল বঙ্গবন্ধুর মতো একজন দেশপ্রেমী জনকল্যাণমুখী ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখার ঘৃণ্য অপতৎপরতা।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি তৎকালীন শাসকদের অপরিসীম আক্রোশ আর তীব্র বিদ্বেষ এবং ঘৃণার পরিণাম ফল (কর্মফল) হিসেবে তারা বিধাতার কাছ থেকে বিধাতার ইচ্ছাতেই পেয়েছে একটি খণ্ডিত পাকিস্তান আর অকল্পনীয় পরাজয়ের গ্লানি। মহান সৃষ্টিকর্তা তার দেশপ্রেমী বান্দাকে পক্ষান্তরে রাজার আসনেই বসালেন কারাগার থেকে বের করে এনে।
বিধাতার ইচ্ছার প্রতিফলনের দ্বিতীয় দৃশ্যমান নজির বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে অকল্পনীয় সব দুর্যোগ থেকে বাঁচিয়ে রেখে ‘সাম্রাজ্য দান’। বঙ্গবন্ধুরই ঔরসজাত জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনাকে পঁচাত্তরের পনেরো আগস্টের হত্যাযজ্ঞ এবং নির্বাসন থেকে দেশে ফেরার পর দেড় ডজনের বেশিবার হত্যার ষড়যন্ত্র থেকে বাঁচিয়ে বাংলার সাম্রাজ্যের অধিপতি করেছেন তিনি যিনি যাকে ইচ্ছা তাকে সাম্রাজ্য দান আর সম্মানিত করার একক ক্ষমতা রাখেন।
পক্ষান্তরে, যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে আর বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বারবার দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার অপচেষ্টা করেছে, তারা সবাই তাদের অপকর্মের শাস্তি হিসেবে বিধাতার ইচ্ছাতেই সাম্রাজ্য হারিয়ে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। সব ক্ষমতার একমাত্র মালিক মহান সৃষ্টিকর্তা বঙ্গবন্ধুকে দিয়ে যা যা করাতে চেয়েছেন তা তিনি তাকে দিয়ে করিয়েছেন- একটি শোষিত জনগোষ্ঠীকে সার্বভৌম একটি ভ‚খণ্ড দিয়েছেন তারই নেতৃত্বে।
একই সাথে করুণাময় বিধাতা তাকে দিয়েই যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠিত করাসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকা সচল করিয়েছেন, অতি অল্প সময়ের মধ্যে ক‚টনৈতিক জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিয়ে শতাধিক দেশের স্বীকৃতি আদায়ে সফলতা দিয়েছেন, সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় সহায়তা করেছেন এবং দেশের অভ্যন্তরে শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টকারীদের ওপর আধিপত্য দিয়েছেন। অপরদিকে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে বিধাতা বহু রকমের ষড়যন্ত্র থেকে শুধু রক্ষাই করেননি, তাকে রাজসিংহাসনে বসিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের শাসনামলে ভেঙে পড়া অর্থনীতির খোলনলচে পুরোপুরি পাল্টে দিয়ে অভাবনীয় সমৃদ্ধির দিকে ধাবিত করছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন, একদিন পূর্ব বাংলা স্বাধীন হবে, বাঙালি জাতি একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে নিজস্ব একটি আসন তৈরি করবে আর ক্ষুধা, দারিদ্র্য, শোষণ, বঞ্চনা, আয় বৈষম্য, সম্পদবৈষম্য থেকে মুক্ত হয়ে একটি সুশাসিত রাষ্ট্রের মালিক হবে। তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বিরাজমান অরাজক পরিস্থিতিতে যখন তিনি আপ্রাণ লড়াই করে যাচ্ছিলেন বহুবিধ ষড়যন্ত্র আর বাধার বিরুদ্ধে এবং সফলতার প্রায় দ্বারপ্রান্তে পৌঁছার মতো অবস্থায় উপনীত হলেন, তখনই দেশবিরোধী এবং অনৈতিক পন্থায় ক্ষমতা শিকারিরা ঝাঁপিয়ে পড়ে তার এবং তার পরিবারের ওপর।
প্রায় নিঃশেষ করে দেয় পুরো পরিবারকে; দয়াময় সৃষ্টিকর্তা বাঁচিয়ে রাখেন শুধু দুই কন্যাকে। এ দুজনকে বাঁচিয়ে রাখাও বিধাতার লীলাখেলারই অংশ। বড়জনকে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সৃষ্ট রাষ্ট্রটিকে স্বমহিমায় টিকিয়ে রাখবেন এমনটিই মনে হয়েছিল বিধাতার মনে। তারই অদৃশ্য ইশারায় বঙ্গবন্ধুকন্যা ফিরে আসেন স্বদেশে অনেক বছর পরবাসী জীবন যাপন করার পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে যখন স্বাধীনতাবিরোধী সামরিক-বেসামরিক চক্রের হাতে পড়ে দেশ হাবুডুবু খাচ্ছিল অরাজকতাপূর্ণ অপশাসনের গভীর জলাধারে। বঙ্গবন্ধুকন্যা এলেন আর অতি অল্প সময়ের ভেতর জয় করে নিলেন সবার হৃদয়, একমাত্র মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া যাদের পা ছিল বাংলাদেশে আর অন্তর ছিল পাকিস্তানে।
বিধাতা বঙ্গবন্ধুকে দিয়েছিলেন অসাধারণ বিচক্ষণতা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর দূরদৃষ্টি। আরো দিয়েছিলেন মানুষকে ভালোবাসা, মমতা, শ্রদ্ধা দিয়ে মুগ্ধ করার ক্ষমতা; প্রতিক‚লতা আর ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও লক্ষ্যে স্থির থাকার অসীম ধৈর্য; রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার দক্ষতা; সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে সবাইকে নিয়ে কাজ করার গণতান্ত্রিক মানসিকতা; সব দলমতের অনুসারীদের নিয়ে জাতীয় ঐক্যের পথ তৈরির দক্ষতা আর বিশাল জনগোষ্ঠীর অধিনায়ক হবার মতো দৈহিক-মানসিক ওজস্বিতা।
বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা প্রাপ্তির পরবর্তী সাড়ে তিন বছরে বড় ধরনের দুর্ভিক্ষ থেকে সদ্য স্বাধীন দেশকে বাঁচিয়েছেন অর্থনীতি একেবারেই নড়বড়ে থাকা সত্তে¡ও। আর বঙ্গবন্ধুকন্যা স্বীয় মেধা আর দক্ষ নেতৃত্ব দিয়ে চিরতরে দূর করেছেন এককালে দেশটির ঘাড়ে চেপে বসা মৌসুমি মঙ্গা আর ক্রনিক খাদ্য সঙ্কট।
যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ডাকবিভাগকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, আর বঙ্গবন্ধুকন্যা পুরো দেশের পরিবহন আর যোগাযোগ সিস্টেমের মধ্যেই বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছেন। তারই ভিশনারি উদ্যোগের কারণে এদেশ আজ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। বঙ্গবন্ধু যমুনার ওপর সেতু তৈরির স্বপ্ন দেখেছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা বিশাল পদ্মা নদীর ওপর অভাবনীয় সেতু তৈরি করে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, সদিচ্ছা আর সততা থাকলে পরের সাহায্য ছাড়াই অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
নিরন্তর লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে পথ অতিক্রম করে অর্থনৈতিক-সামাজিক-মানবীয়-শিক্ষাক্ষেত্রে অভাবনীয় অনেক কিছু অর্জন করে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শুধু দেশবাসীকে নয়, বিশ্ববাসীকেও তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তার একটি উদাহরণ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, যা বঙ্গবন্ধুর নামটি সুদূর আকাশে ভাসিয়ে দিয়েছে অনাদিকালের জন্য, যে নামটি অনেকবার মুছে দিতে চেয়েছিল পাকিস্তানের পদলেহনকারীরা।
বঙ্গবন্ধু সারাদেশে রাস্তাঘাট উন্নয়নকল্পে অনেক কিছু করেছেন; বঙ্গবন্ধুকন্যা অনেক হাইওয়ে ফোর লেন করা ছাড়াও কর্ণফুলী নদীর তলা দিয়ে টানেল তৈরি করে বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন। মুদ্রাস্ফীতিকে কঠোর নিয়ন্ত্রণে রেখে, প্রবৃদ্ধির হার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করে, কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সমৃদ্ধ করে, শিল্পকারখানার প্রসার ঘটিয়ে এবং দারিদ্র্যের হার বহুলাংশে কমিয়ে এনে দেশকে উন্নয়নের মহীসোপানে এনে তুলেছেন। এখন উন্নয়নকে টেকসই করার কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন।
সমুদ্র অর্থনীতির বিকাশের দিকে নজর দিয়েছেন। সামনের একশ’ বছরকে বিবেচনায় রেখে ডেল্টা প্ল্যান তৈরি করে বাংলাদেশের আগামীকে নতুনরূপে সাজানোর ভাবনা করছেন। এসব ছাড়াও, শত প্রতিক‚লতা আর হুমকি-ধমকির মুখে অটল-অবিচল থেকে জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার করেছেন, শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন; শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকারী আলবদর-আলশামস বাহিনীর ঘৃণ্য নেতৃস্থানীয়দের বিচারের মুখোমুখি করেছেন। হাজারো রকমের ভীতি প্রদর্শন আর ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করে জাতির বুকে চেপে বসা দুষ্ট ক্ষত সারানোর মতো সুকঠিন কাজটি তিনি শুধু দয়াময় স ষ্টার প্রদত্ত কল্যাণের কারণেই সম্পন্ন করতে পেরেছেন।
বাঙালিদের মনে বাঙালির স্বাধিকারের বীজ বপন আর বাঙালিদের মনে নিজেদের জন্য একটি স্বাধীন দেশ সৃষ্টির অনুপ্রেরণা সৃষ্টির প্রত্যয় নিয়ে রাজনীতির ময়দানে যিনি সারা জীবন হেঁটেছেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদকে যিনি উজ্জীবিত করেছেন, যার কারণে বাঙালি জাতি অবদমিত আত্মপ্রকাশের ভাষা খুঁজে পেয়ে নিজেদের সারা বিশ্বে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে পেরেছে, তার আদর্শকে আমরা ধারণ করব সর্বসময়ে আমাদের অন্তরে, মননে আর চেতনায়।
বাংলাদেশে স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনসহ স্বাধীনতার সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনাকালে যে নামটি অপরিহার্য অংশ হয়ে দেখা দেবে সর্বকালে, সে নামটির সাথে যারা বেইমানি করেছে এবং এখনো করছে তাদের বোঝা উচিত বঙ্গবন্ধুর নাম কখনো মুছে ফেলা যাবে না; মুছে ফেলার মতো নাম নয় এটি। ইতিহাসের অপরিহার্য উপাদান হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিরকাল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবেই শুধু নন, বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টির রূপকার হিসেবে সর্বোচ্চ আসনেই থাকবেন।
যে বাংলা ভাষা প্রতিদিন প্রতি মুহূর্ত একজন বাঙালিকে আবেগের চাদরে ঢেকে রাখে, যে ভাষার গান আমাদের অনুভবের দেয়ালে প্রতিনিয়ত সুখের চিত্র অঙ্কন করে, সেই ভাষাকে যিনি অবিচল নেতৃত্ব দিয়ে উর্দুবিলাসীদের চক্রান্তে বিলীন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করাসহ বাঙালির অবিভাজ্য সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য রক্ষার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করেছেন এবং সর্বোপরি যিনি সব বাঙালির স্বাধীনতার স্বাপ্নিক হয়ে ‘বাঙালির বহু বছরের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন’, তাকে মর্যাদা দিতে কার্পণ্য করতে পারে এমন একটি বাঙালিও এ দেশে থাকুক তা আমরা কস্মিনকালেও কামনা করি না। মুজিবর্ষে এ-ই হোক আমাদের প্রত্যয়। একই সাথে আমরা প্রত্যাশা করি, বঙ্গবন্ধুকন্যার হাতেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার সোনালি সূর্য সত্যিকারের সোনার বাংলা হিসেবে উদিত হয়ে সুবিশাল নীল গগনে আলোর প্রভা ছড়িয়ে বিস্তৃত হোক।
আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধনী দিনে, মুজিববর্ষ শুরুর প্রাক্কালে আহ্বান জানাই, আসুন প্রতিজ্ঞা করি, দলমত-গোত্র-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবাই মিলে বঙ্গবন্ধুকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রেখে তার প্রাপ্য সম্মান দেই; জাতির পিতার আসনে আসীন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করি; মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে জাতির পিতাকে কোনো দলের মধ্যে গণ্ডিবদ্ধ না করে তার আদর্শকে উপলব্ধির মাধ্যমে তাকে সার্বজনীন করি।
তার নামটিকে ঐতিহাসিক মহিমায় আলিঙ্গনাবদ্ধ করি; সরকারবিরোধিতার নামে বঙ্গবন্ধুকে অবজ্ঞা করার অগ্রহণযোগ্য সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসি; সব নাগরিকের হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুকে স্বমহিমায় দেদীপ্যমান করে তুলি; মুক্তিযুদ্ধবেরোধী একটি মানুষও নেই এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলি; জাতির পিতা আর স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী মনোভাব নিয়ে যারা মুখোশের আড়ালে এখনো মাঠে তৎপর তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দেই; প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের জন্য চলার রাস্তা কণ্টকহীন করার লক্ষ্যে দেশবিরোধীদের চেহারার ওপর থেকে মেকি খোলসটা সরিয়ে দেই এবং জনমানুষের সমৃদ্ধি বৃদ্ধির মানসে দুর্নীতিমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুকন্যার হাতকে শক্তিশালী করি।
লেখক: কলামিস্ট; উপাচার্য, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
পাঠকের মতামত: